দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা যেমন- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল মঙ্গাপীড়িত হিসেবে খ্যাত। এসব অঞ্চল কম বৃষ্টিপাতের ফলে রবি শস্য ও ধান চাষের জন্য প্রায় অনুপোযোগী। শুষ্ক মৌসুমে এখানে সুপেয় পানির খুবই অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া এতদ অঞ্চলে অনাবৃষ্টির ফলে কৃষকরা কৃষি কাজ করতে পারছেনা। তবে করতোয়া নদী তীরবর্তী কিছু অঞ্চল পানি বিধৌত হওয়ায় এলাকাটি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী এবং এ অঞ্চলে প্রচুর ফসলও ফলে। তাছাড়া বসবাসের জন্য এ অঞ্চলটি খুবই চমৎকার।
দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। তাদের মধ্যে মন্ত্রতন্ত্র, যাদু-টোনা ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। পাহাড়ে চলা ফেরার সময় তাদের মাঝে বিভিন্ন ভয়ভীতি কাজ করতো। ফলে তারা বিভিন্ন শক্তিকে দেবতা মনে করে পূজা করতো। অপর দিকে এদের মাঝে এক শ্রেণির পাহাড়ী লোক ছিলো যারা কখনো এ সমস্ত পূজা-পার্বণ, যাদু-টোনায় বিশ্বাসী ছিলেন না। তারা সৎভাবে জীবন যাপন করতেন এবং একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিলেন।
দৃশ্যকল্প-১: সাতবাড়িয়া গ্রামে কোনো মাদ্রাসা না থাকায় গ্রামের সকলে মিলে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। কিন্তু মাদ্রাসার নামকরণ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব-কলহ শুরু হয়। এমনকি ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় স্থানীয় মসজিদের খতিব সাহেব সেখানে গিয়ে মাদ্রাসার নামকরণের প্রস্তাব দিলে সকলেই তা মেনে নেন। ফলে বড় ধরনের সংঘর্ষ থেকে এলাকাবাসী বেঁচে যায়।
দৃশ্যকল্প-২: লঞ্চ দুর্ঘটনায় রিয়াজ তার পিতা-মাতা হারিয়ে অত্যন্ত শোকাহত হয়ে পড়েন। এদিকে তার চাচা, ভাতিজার মানসিক প্রশান্তির জন্য তাকে নিয়ে অন্য একটি দেশে যান। রিয়াজের বিদেশ ভ্রমণের ফলে সে পৃথিবীর বৈচিত্র্য ও বাস্তব জীবনে অনেক ধারণা লাভ করে। যা পরবর্তীতে তার জীবনকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করে তোলে।
মঈন সাহেব নিজ এলাকার অশিক্ষিত ও নিরক্ষর লোকদের শিক্ষাদানের জন্য নিয়মিত শিক্ষাদান কার্যক্রম করতে থাকলে ঐ এলাকার বিত্তশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ তাঁকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, লাঞ্চিত ও নির্যাতন করতে থাকে এবং তাঁর শিক্ষাদানে বাঁধাগ্রস্ত করে। তাই তিনি ভগ্ন হৃদয়ে তাঁর এক শিষ্যকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় গিয়ে অনুরূপ কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু সেখানের মানুষও তাঁর এই কাজকে সমর্থন না করে বরং তাঁকে নির্মমভাবে প্রহার ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।
জনাব মুহসিন উদ্দিন নিজ এলাকায় একটি জনকল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠা করে কাজ শুরু করলে এলাকাবাসীর মধ্যে বেশিরভাগ লোক বিরোধীতা করে। ফলে তিনি অনুসারীদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় চলে যান। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় সংঘের কাজ এগিয়ে নিতে থাকেন। একদিন কিছু অনুসারী নিয়ে তিনি নিজ এলাকায় মায়ের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাছাকাছি পৌঁছলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে অনেক আলাপ আলোচনা পর অবশেষে একটি সমঝোতা হয়। তৎক্ষণিকভাবে সমঝোতার ফল জনাব মুহসিন উদ্দিনের বিপক্ষে গেলেও পরবর্তীতে দেখা যায় এর ফলে বিরোধীপক্ষ সর্বদিক থেকে পরাজিত হয়।
ঘটনা-১: জনাব নাঈম দশ বছর পূর্বে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তিনি স্ত্রীর সুযোগ-সুবিধার প্রতি নজর রাখতেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো না। স্বামীর আচরণে তার স্ত্রী সন্তুষ্ট ছিল। নাঈম দম্পতির সুন্দর আচরণ অনেকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।
ঘটনা-২: এখলাছপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ সাহেব অভাব অনটনের সময় গরিব মানুষকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করেন। ঋণ দেয়ার সময় গ্রহীতাদেরকে তিনি বলতেন-আমি তোমাদেরকে যে টাকা দিচ্ছি ফেরত দেয়ার সময় ঠিক তাই আমাকে দিবে। এর অতিরিক্ত এক টাকাও কেউ আমাকে দিবে না।
আহমদ সাহেব বিলসলুয়া গ্রামের মেম্বর। এ গ্রামে বিশ্বাস, মন্ডলসহ বহু গোষ্ঠীর লোকের বসবাস। তিনি সব গোষ্ঠীর লোকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু মেম্বরের নানাবিধ সফলতায় বিশ্বাসগোষ্ঠীর লোকেরা বিভিন্নভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাঁকে মেম্বর পদ থেকে পদচ্যুত করার জন্য অন্য আরেকজনকে সমর্থন দেয়। এমনকি মেম্বর সাহেবকে তারা হত্যার চেষ্টাও করেন। ফলে তিনি বিশ্বাসগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। অন্যদিকে মন্ডলগোষ্ঠীর লোকেরা তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। এ প্রেক্ষিতে তাদেরকে তিনি নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
ঘটনা-১: আলমগীর হোসেন একজন ইউপি মেম্বর। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনায় তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেন। যে কারণে যুবক ও বয়স্কদের সমন্বয়ে একটি উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটি গঠন করেছেন। ফলে ওয়ার্ডের অধিবাসীদের অভিযোগ ও পরামর্শ মোতাবেক এলাকার সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার জনসমর্থন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঘটনা-২: ইউনুছ মিয়া উমিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান। জনহিতৈষী চেয়ারম্যান হিসেবে তার অনেক সুনাম রয়েছে। তার প্রাত্যহিক দায়িত্বের বাইরে তিনি প্রায় প্রতিটি বাড়ির খোঁজ-খবর রাখেন। অসুস্থ, বয়স্ক, প্রসূতি মা অথবা বিপদগ্রস্ত মানুষের আস্থার প্রতীক তিনি। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে এলাকার যুবক ও নারীদের কল্যাণে বাবার সাথে একাত্ব হয়ে কাজ করেন।
ঘটনা-১: আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশীদ তৎকালীন সময়ে জনগণের পানির কষ্ট দূর করার জন্য কৃষিকাজে সেচের সুবিধার জন্য একটি কূপ খনন করেন। ইতিহাসে এটি নহর-ই-জুবাইদা নামে পরিচিত। এটি খনন করতে গিয়ে তিনি কোন রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় না করে বরং নিজ অর্থায়নে কূপটি খনন করেছিলেন। এতে খলিফার দানশীল মনোভাব এর পরিচয় পাওয়া যায়।
ঘটনা-২: আব্দুল কাইউম এ.আর কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর কোম্পানির উন্নয়নে অনেক পরিশ্রম করতেন। একসময় কোম্পানিতে কিছু কর্মীর প্রয়োজনীয়তা দেখে দিলে তিনি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেন। ঘটনাক্রমে কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই তার পরিচিত, বন্ধু ও আত্মীয় ছিল। তাই সাধারণ কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে পদচ্যুত করার জন্য বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়।
উপজেলার চেয়ারম্যান সেলিম সাহেব তার এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তাঁর পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো এলাকা ও চরাঞ্চলসমূহে একাধিকবার অভিযান চালান এবং প্রতিটি অভিযানেই তিনি বাঁধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে সফল হন। প্রত্যেক অভিযান শেষে তিনি ঐ এলাকার ধন-সম্পদ, মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। সংগৃহীত অর্থ তিনি জনহিতকর কাজে ব্যয় করেন। তিনি সকল ধর্মের মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক রাখায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
সালাউদ্দীন আইয়ূবী তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলে শত্রু পক্ষের সবাই একত্রিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শত্রুপক্ষের ব্যাপক আক্রমণে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পিছু হটেন। কয়েকমাস সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তিনি আবারও পূর্ব শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অতীর্ণ হন। শত্রুপক্ষের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করে তিনি বিরাট এলাকা নিজের অধিকারে নিয়ে আসেন। নতুন অধিকৃত এলাকায় একজন সৎ ও যোগ্য সেনাপতিকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিজ এলাকায় ফিরে যান।