পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সেতু। এ সেতু চলাচলের উপযোগী হলে দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যাবে বলে প্রত্যাশা সবার। এ প্রকল্পের জন্য সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে অর্থায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করলে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকতে সরকার এ রকম প্রকল্পে অর্থায়ন করেন।
পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়নের গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক এবং নানা দৃষ্টিকোণ থেকে তা প্রাসঙ্গিক। এখানে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা হলো:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করবে। সেতুর মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষির উন্নতি হবে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও বৃদ্ধি ঘটবে।
বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ বন্ধ করার পর সরকার নিজের তহবিল থেকে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের আত্মনির্ভরশীলতা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশ নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেমন পণ্য পরিবহন, স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। সেতু প্রকল্পটি দেশের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থায়ন বাতিলের কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সরকার যখন নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করেছে, এটি দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের সক্ষমতার বার্তা পৌঁছিয়েছে।
এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই নয়, বরং সামাজিক উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং মানুষ আরও উন্নত সুবিধা লাভ করবে। ফলে, দেশের সাধারণ জনগণের জীবনের মানও উন্নত হবে।
এমন বৃহৎ প্রকল্পের অর্থায়ন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা দরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন সরকারকে সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া তৈরি করার চাপ দেয়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য প্রকল্পের জন্যও একটি মডেল হতে পারে।
এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পে প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি হলেও, ভবিষ্যতে তা দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নতি ঘটবে, যা দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহও বাড়াতে সাহায্য করবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন শুধু একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা, আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং সামাজিক উন্নতির একটি প্রতীকও। এর সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে একটি নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে, যেখানে সামগ্রিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।