মৌলিক বলের প্রকৃতি (Nature of Force)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পদার্থ বিজ্ঞান বল (Force) | - | NCTB BOOK
235
235

পৃথিবীতে কত  ধরনের বল আছে জিজ্ঞেস করা হলে তোমরা নিশ্চয়ই বলবে অনেক ধরনেরা কোনো কিছুকে যদি ধাক্কা দিই সেটা একটা বল, ট্রাক যখন বোঝা টেনে নিয়ে যায় সেটা একটা বল, ঝড়ে যখন গাছ উপড়ে পড়ে সেটা একটা বল, চুম্বক যখন লোহাকে আকর্ষণ করে সেটা একটা বল, বোমা বিস্ফোরণে যখন ঘরবাড়ি উড়িয়ে দেয় সেটা একটা বল, ক্রেন যখন কোনো কিছুকে টেনে তুলে সেটা একটা বল। একটুখানি সময় দিলেই এ রকম নানা ধরনের বলের তোমরা একটা বিশাল তালিকা তৈরি করতে পারবে। 

কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপারটি কী জানো? প্রকৃতিতে মাত্র চার রকমের বল রয়েছে, ওপরে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করা হলে দেখা যাবে এগুলো ঘুরে-ফিরে এই চার রকমের বাইরে কোনোটা নয়! আসলে মৌলিক বল মাত্র চারটি। সেগুলো হচ্ছে: মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও সবল নিউক্লিয় বল। 

common.content_added_by

মহাকর্ষ বল

249
249

এই সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তাদের ভরের কারণে একে অপরকে যে বল দিয়ে আকর্ষণ করে সেটাই হচ্ছে মহাকর্ষ বল। এই মহাকর্ষ বলের কারণে গ্যালাক্সির ভেতরে নক্ষত্ররা ঘুরপাক খায় কিংবা সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে, পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদ ঘোরে! পৃথিবীর মহাকর্ষ বল যখন আমাদের ওপর কাজ করে আমরা সেটাকে বলি মাধ্যাকর্ষণ। এই মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে, অর্থাৎ নিচের দিকে টেনে রেখেছে এবং এর কারণেই আমরা নিজেদের ওজনের অনুভূতি পাই । 

পদার্থবিজ্ঞানের একটি চমকপ্রদ বল হচ্ছে মহাকর্ষ বল। ভর আছে সেরকম যেকোনো বস্তু অন্য বস্তুকে মহাকর্ষ বল দিয়ে আকর্ষণ করে। আমরা এই অধ্যায়ে মহাকর্ষ বল নিয়ে আরেকটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। 

 

common.content_added_by

তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বক বল (Electromagnetic Force)

341
341

চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে সেটা দিয়ে কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করা বা চুম্বক দিয়ে অন্য চুম্বককে আকর্ষণ-বিকর্ষণ আমাদের অনেকেই কখনো না কখনো করেছি। যদিও তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এবং চুম্বকের বলকে আলাদা ধরনের বল মনে হয় আসলে দুটি একই বল। শুধু দুইভাবে দেখা যায়। শুধু এই বলটা আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ দুটোই করতে পারে, অন্যগুলো শুধু আকর্ষণ করতে পারে বিকর্ষণ করতে পারে না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তুলনায় এটা অনেক শক্তিশালী (1036গুণ বা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ শক্তিশালী!) কথাটা যে সত্যি সেটা নিশ্চয়ই তোমরা অনুমান করতে পারবে, কারণ যখন একটা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে একটা কাগজকে আকর্ষণ করে তুলে নাও তখন কিন্তু সেই কাগজটাকে পুরো পৃথিবী তার সমস্ত ভর দিয়ে তৈরি মাধ্যাকর্ষণ বল দিয়ে টেনে রাখার চেষ্টা করে, তবু তোমার চিরুনির অল্প একটু বিদ্যুৎ সেই বিশাল পৃথিবীর পুরো মাধ্যাকর্ষণকে হারিয়ে দেয়। 

common.content_added_and_updated_by

দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak Nuclear Force)

260
260

এটাকে দুর্বল বলা হয় কারণ এটা তড়িৎ চৌম্বক বল থেকে দুর্বল (প্রায় ট্রিলিয়ন গুণ) কিন্তু মোটেও মহাকর্ষ বলের মতো এত দুর্বল নয়। মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বক বল যেকোনো দূরত্ব থেকে কাজ করতে পারে কিন্তু এই বলটা খুবই অল্প দূরত্বে (10-18 m) কাজ করে! তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যে বেটা (β) রশ্মি বা ইলেকট্রন বের হয় সেটার কারণ এই দুর্বল নিউক্লিয় বল। 

common.content_added_and_updated_by

সবল নিউক্লিয় বল (Strong Nuclear Force)

312
312

এটি হচ্ছে সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে শক্তিশালী বল, তড়িৎ চৌম্বক বল থেকেও একশ গুণ বেশি শক্তিশালী কিন্তু এটাও খুবই অল্প দূরত্বে (10-15m) কাজ করে। পরমাণুর কেন্দ্রে যে নিউক্লিয়াস রয়েছে তার ভেতরকার প্রোটন এবং নিউট্রনের নিজেদের মাঝে এই প্রচণ্ড শক্তিশালী বল কাজ করে নিজেদের আটকে রাখে। প্রচণ্ড বলে আটকে থাকার কারণে এর মাঝে অনেক শক্তি জমা থাকে। তাই বড় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কিংবা ছোট নিউক্লিয়াসকে জোড়া দিয়ে এই বলের কারণে অনেক শক্তি তৈরি করা সম্ভব। নিউক্লিয়ার বোমা সে জন্য এত শক্তিশালী। সূর্য থেকে আলোর তাপও এই বল দিয়ে তৈরি হয়। 

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই চার ধরনের বলের মূল এক জায়গায় এবং তাঁরা সবগুলোকে এক সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। তড়িৎ চৌম্বক (বিদ্যুৎ চৌম্বকীয়) এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে এর মাঝে একই সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে এবং সেটি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি আকাশছোঁয়া সাফল্য! (কাজেই তুমি ইচ্ছে করলে বলতে পারো বল তিন ধরনের: মহাকর্ষ, ইলেকট্রো উইক (Electro-weak) এবং নিউক্লিয়ার বল। কেউ এটাকে ভুল বলতে পারবে না!) অন্যগুলোকেও এক সূত্রে গাঁথার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন । 

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion